খাড়া উঁচু পাহাড়। দেখতে ঠিক হাতির মাথার মতো। তাই শত শত বছর ধরে স্থানীয় আদিবাসীরা একে ডাকে হাতিমাথা বা হাতিমুড়া নামে। এখানকার পাহাড়ি উঁচু পথকে স্থানীয়রা হাতিমুড়া/মায়ুং কপাল বলে ডাকে। এখানেই রয়েছে স্বর্গের সিঁড়ি। না, সত্যিকার স্বর্গে যাওয়ার সিঁড়ি নয়, তবে এই সিঁড়ি আপনাকে নিয়ে যাবে পাহাড়ের চূড়ায় অসাধারণ সুন্দর আদিবাসী গ্রামে। স্বর্গের সিঁড়িটি ভূমি থেকে উঠে গেছে সোজা উপরের দিকে। পাহাড়ের গায়ে সবুজ বনের ফাঁকে ফাঁকে খাড়া উঠে যাওয়া এই সিঁড়ির শেষ দেখা যায় না। মনে হয় যেন উপরে স্বর্গেই শেষ হয়েছে সিঁড়িটা। আর তাই একে স্বর্গের সিঁড়ি নামে ডাকা হয়।
খাগড়াছড়ি জেলার উপজেলা সদরের পেরাছরা ইউনিয়নে এই স্বর্গের সিঁড়িটি অবস্থিত। চাকমা ভাষায় যার নাম ‘এদো সিরে মোন’। খাড়া পাহাড় ডিঙিয়ে যাওয়া দুর্গম এই পথটি মূলত ১৫ টি গ্রামের যাতায়াত পথ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সদর উপজেলা ও মাটিরাঙ্গা উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম ভাঙ্গামুড়া, বাদলছড়া, মাখন তৈসা পাড়া, কিনাপা পাড়া, হাজা পাড়া, বগড়া পাড়া, কেশব মহাজন পাড়া, সাধুপাড়া, কাপতলা পাড়ার মানুষের জীবন যাত্রাকে সহজ করার জন্য সরকারী উদ্যোগে নির্মিত হয়েছে ৩০৮ ফুট লম্বা লোহার তৈরি এই সিঁড়ি।
আনুমানিক ১২০-১১০ ডিগ্রি এঙ্গেলের খাড়া প্রায় ৩০০ সিঁড়ি বেয়ে হাতিমাথা পাহাড়ের উঠতে হয়। হিমশীতল এই সিঁড়ি বেয়ে যখন পাহাড়ের চূড়ায় উঠতে থাকবেন তখন নৈসর্গিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে আপনার চোখ ধাঁধিয়ে যাবে। চারদিকে শুধু সবুজ আর সবুজ। বনের মাঝে এঁকেবেঁকে যাওয়া এই সিঁড়িটি দেখতে ভয়ংকর লাগলেও আসলে তেমনটা নয়। একটু সাবধানতা বজায় রেখে উঠলেই হবে। এই আঁকাবাঁকা সিঁড়ি দিয়ে পাহাড়ি পথে চলার সময় মনে হবে যেন স্বর্গের সৌন্দর্য ধরা দিয়েছে মর্ত্যলোকে। একটু ভিন্ন আমেজের ভ্রমণ অভিজ্ঞতা পেতে তাই আপনাকে ঘুরে আসতে হবে এই স্বর্গের সিঁড়ি থেকে।
যাওয়ার উপায়:
খাগড়াছড়ি থেকে পানছড়ি যাওযার পথে জামতলীস্থ যাত্রী ছাউনির সামনে বামদিকের রাস্তা ধরে সোজা যেয়ে চেঙ্গী নদী পার হয়েই ডান দিকে স্কুল রোডের দিকে যেতে হবে। স্কুলের নাম পল্টনজয় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। ওখানে গিয়েই একটি দোকান পাবেন। দোকানে সামনে দিয়ে ডানের মূল মেঠো পথ দিয়ে যেতে হবে। দুটি বাঁশের সাঁকো পার হলে একটি ধান ভাঙ্গানোর কল সামনে পড়বে। এবার ডানদিকে ছড়ার পাশ দিয়ে যে ছোট্ট রাস্তা গেছে,সেটি দিয়ে আরেকটি বাঁশ-গাছের সাঁকো পার হয়ে এবার সোজা মূল মেঠো পথ ধরে এগিয়ে যেতে হবে। এখানে সামনে যে পাড়া আছে, তার নাম বগড়া পাড়া,ইদানীং অনেকে বলে লারমা পাড়া। সামনে কিছু দূরেই আবার আরেকটু বিস্তৃত ছড়া পড়বে। ওখানে গিয়ে বায়ে-ডানে এগিয়ে গিয়ে সামনের বড় টিলাটি পার হতে হবে। এবারও সোজা মূল মেঠো পথ ধরে এগিযে যেতে যেতে সামনে লোকালয় পাবেন। সামনের মাঠটি সোজা পার হয়ে দেখবেন কৃষকের মাঠ স্কুল লিখা সাইনবোর্ড গাছে লাগানো। এ এলাকার নাম কাপতলা। তো হাতের ডানের নিচুপথ ধরে এগিয়ে যান। যেতে যেতে সামনে দুই রাস্তা পাবেন,ডান দিক দিয়ে সোজা যাবেন। এই ছোট্ট মেঠো পথ ধরে এগোলেই কিছুক্ষণ পর পেয়ে যাবেন অসাধারণ হাতিমুড়া বা স্বর্গের সিঁড়ি। সব মিলিয়ে আপনার পৌঁছাতে সময় লাগবে ঘন্টাখানেক।
থাকার উপায়:
খাগড়াছড়িতে পর্যটন মোটেলসহ বিভিন্ন মানের থাকার হোটেল রয়েছে।
পর্যটন মোটেল: মোটেলের সব কক্ষই ২ বিছানার। ভাড়া: এসি ২১০০ টাকা, নন-এসি ১৩০০ টাকা। এসি স্যুইট রুম ৩১০০ টাকা। যোগাযোগ: ০৩৭১-৬২০৮৪৮৫।
হোটেল ইকো ছড়ি ইন: এটি রিসোর্ট টাইপের হোটেল। যোগাযোগ: ০৩৭১-৬২৬২৫, ৩৭৪৩২২৫।
হোটেল শৈল সুবর্ণ: যোগাযোগ: ০৩৭১-৬১৪৩৬, ০১১৯০৭৭৬৮১২।
হোটেল জেরিনঃ যোগাযোগ: ০৩৭১-৬১০৭১।
হোটেল লবিয়তঃ যোগাযোগ: ০৩৭১-৬১২২০, ০১৫৫৬৫৭৫৭৪৬।
হোটেল শিল্পী: যোগাযোগ: ০৩৭১-৬১৭৯৫।
প্রয়োজনীয় কিছু ভ্রমণ টিপস:
- যাবার সময় হালকা খাবার ও পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার পানি সঙ্গে করে নিয়ে যাবেন।
- স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রা ব্যহত হয়, পরিবেশ নষ্ট হয় এমন কাজ থেকে বিরত থাকবেন।
0 মন্তব্যসমূহ
মন্তব্য বিষয়ক দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় বহন করবে না।