কালো নদী ভারত বাংলাদেশের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। এই নদীটি কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলার ভুন্দুর চর নামক গ্রাম দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক পীলার ১০৬৬ ও ১০৬৭ এর মাঝ দিয়ে নদীটি বাংলাদেশে প্রবেশ করে। ভারত অংশে নদীটির এক পাড়ের গ্রামের নাম দাসপাড়া,অন্য পাড়ের গ্রামের নাম কালার চর। যা ভারতের মাইনকার চরে অবস্থিত। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় রৌমারী মুক্তাঞ্চল ছিল। তখন হাজার হাজার শরনার্থী মাইনকারচরে আশ্রয় নিয়েছিল। মাইনকারচরে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে অনেক যোদ্ধা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন।
কালো নদীটি ভারতে মেঘালয় রাজ্যের পশ্চিম গারো পাহাড় ঘেষে গড়ে উঠা নকরেক জাতীয় উদ্যান থেকে ২ কিলোমিটার দূরের তুরা পর্বতের পেলগা ঝর্ণা থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। উৎপত্তি স্থানে নদীটির নাম গানোল নদী। এই গানোল নদী সর্পিলাকারভাবে এঁকেবেঁকে মেঘালয় রাজ্য থেকে মাইনকারচর সার্কেল অফিসের অদূরেই কালো নদী নাম ধারণ করে আসাম রাজ্যে প্রবেশ করে। বাংলাদেশ অংশে ১০৬৬ পিলার সংলগ্ন নদীর কিনারে দাঁড়ালে কালো নদীতে যে ব্রীজ দেখা যায় সেটির প্রস্থ বর্তমানে নদীর প্রস্থর থেকে কয়েক গুণ বড়। উক্ত ব্রীজ প্রমান করে একসময় কালো নদী কত বড় ছিল।
পেলগা ঝর্ণা ধারার উপর নির্মিত ঝুলন্ত ব্রীজ থেকে তোলা গানোল নদী। ছবি: স্যাটেলাইট |
নদীটি বাংলাদেশ অংশে প্রবেশের পর দক্ষিণদিকে মাত্র ১ কিলোমিটার বা তারও কম প্রবাহিত হয়েছে। এই ১ কিলোমিটার পথ পরিক্রমার পর কালো নদী রৌমারী ইউনিয়নের কালাবাড়ি মৌজার উত্তর বারবান্দা গ্রামে জিঞ্জিরাম নদীর সাথে মিলিত হয়েছে।
কালো নদীতে বছরে ৩ ধরণের পানি প্রবাহ দেখা দেয়। বর্ষা মৌসুমে কালো নদীর পানি থাকে লালচে রঙের। পাহাড়ি ঢলের কারণে এই রঙ বলে স্থানীয়দের ধারণা। শুষ্ক মৌসুমে কালো নদীর পানি থাকে কালো। অন্য সময়ে পানি ট্যালট্যালে ঘোলা থাকে।
কালো নদীর প্রকৃতি সর্পিলাকার। উৎপত্তি স্থান থেকে সাপের মতো প্যাচানো আকৃতি ও প্রকৃতি নিয়ে তুরা পর্বত থেকে সমতলে নেমে আসে কালো নদী।
নদীটি আন্তঃসীমান্ত নদী হলেও বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তালিকায় কালো নদীর সম্পর্কে কোন ব্যাখ্যা কিংবা নদী পরিচিতি নাম্বার নেই। অথচ বাংলাদেশের স্বাধীনতার সময় এই কালো নদীর ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ।
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে কালো নদীর তীরে। ছবি: আফসানা আশা |
কথক-
জাহানুর রহমান খোকন
নদী কর্মী
2 মন্তব্যসমূহ
চমৎকার নদী কাহিনী। যত পড়ছি তত মুগ্ধ হই। যারা লিখেছেন এবং ছবি তুলেছেন তাঁদের জন্য রইলো অভিনন্দন। বিশ্বের দরবারে কুড়িগ্রামের নদী তথ্য ও চর কাহানী মানুষের হৃদে বড় আবাদযোগ্য চর ফেলুক । শুভকামনা রইলো। নতুন কোন ভালোলাগার চরে কথা হবে আবার ।
উত্তরমুছুনতুমুল লাইগল বাই। এমন লিখা আরো বারংবার পড়িতে চাই। নদী আমি খুব ভালোবাসি
উত্তরমুছুনমন্তব্য বিষয়ক দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় বহন করবে না।