সকাল বেলা ঘুম চোখে কল রিসিভ করতেই তার প্রশ্ন, পিতু ভাই কেমন আছেন? তার নাম ছিল শিলা। শান্তনা তাহমিন শিলা। মেঠো পথের শেষ ধারে যে জীবনান্দের ভিটা দেখা যায়, সেখানেই তার বাসা।শিলা আমার মামাতো বোন।তার বিয়ে ঠিক হয়েছে। এ মাসের প্রথম সপ্তাহের মঙ্গলবার তার বিয়ে। ছেলে বড় ব্যবসায়ী। নাগেশ্বরীতে তার বাবাকে সবাই এক নামে চেনে। নাম আজিজ মোল্লা। শুনেছি মোল্লা গ্রুপের মালিক না কি তার দূর সম্পর্কের খালাতো ভাই হন।
-ভাল আছি, তুমি কেমন আছ?
-আমি ভাল নাই। পিতু ভাই আপনি কি আজ আমাদের বাসায় একটু আসতে পারবেন? খুব দরকার।
-আচ্ছা, আমি আসবো। আমি সহজাত ভঙ্গিতে উত্তর দিলাম।
- আসবো না, এখনেই আসেন। শোনেন ভাল জামা কাপড় পরে আসবেন। আর হ্যাঁ সাথে কিছু টাকা পয়সা নিয়ে আসিয়েন।
-আচ্ছা আসতেছি কিন্তু ব্যাপার কি? জিজ্ঞাসা করতেই শিলার পাল্টা প্রশ্ন।
-পিতু ভাই, আমাকে নিয়ে পালাতে পারবেন?
-তোমাকে নিয়ে পালাবো মানে?
-পালাবেন মানে, বাবা যে ছেলের সাথে আমার বিয়ে ঠিক করেছে আমি সে বিয়েতে রাজি নই,আমাকে বাসা থেকে নিয়ে ভাগবেন। প্লিজ আপনি আমায় বাসা থেকে পালিয়ে নিয়ে যান প্লিজ।
-আচ্ছা আমি আসতেছি৷ দেখি কি করা যায় বলতেই শিলা যেন একটু শান্ত হলো। আমায় কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বললো পিতু ভাই, আসার সময় ব্যাপারীহাট থেকে দুইটা ঢাকার টিকিট কেটে আসবেন।
আমি বোকার মতো হ্যাঁ বলি। শিলাও ফোনটা কেটে দেয়।
আমি ভাবতে থাকি যে শিলাকে পাঁচ বছর ধরে ভালবেসে আসছি, বেকার বলে আমার ভালবাসায় সে কোন পাত্তা দেয় নি, আজ সে শিলার এমন কি হলো যে আমার সাথে পালাতে চায়? এমন সময় শিলা আবার কল দেয় পিতু ভাই আপনার আসার দরকার নাই আমি একাই ব্যাপারীরহাট যেতে পারবো, আপনি আসলে আবার আপনাকে সন্দেহ করবে। আপনি বরং কাউন্টারে টিকিট কেটে বসে থাকেন।
-হ্যাঁ সেটাই ভাল হয়।
আপনি কিন্তু তাড়াতাড়ি আসবেন, আমার একা থাকতে ভাল লাগবে না বলে শিলা ফোনটা রেখে দেয়।আমি আর বেশি কিছু না ভেবে যাওয়ার জন্য তৈরি হতে বিছানা ছেড়ে উঠি। নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করি এতো ভাবার কি আছে, শিলা আমাকে ভালবাসে আমিও শিলাকে। সে আমার সাথে পালাতে চায় আমি তাঁকে নিয়ে পালাবো এটাই তো সিনামায় ঘটে। সুযোগ বারবার আসে না। সুযোগ যখন এসেছে, সে সুযোগ হারাতে চাই না। বাক্স বন্ধি লন্ড্রি করা জামাটা গায়ে দিয়ে বন্ধু আজমের কাছে দুই হাজার টাকা ধার নিয়ে রওনা দিলাম ।
আমি ব্যাপারীর হাটে গিয়ে পিংকি গাড়ির দুইটা টিকিট কেটে অপেক্ষা করতে থাকি। সন্ধ্যা ৭ টা ৪৫ মিনিটে শিলা এসে হাজির হয়, পিতু ভাই আপনি এসেছেন, খুব ভাল কাজ করেছেন। তারপর শিলা আমার পাশে এসে বসে এবং বারবার এদিক-সেদিন কি যেন খুঁজছিল আর ঘামছিল। ভাবলাম বাসা থেকে পালিয়ে এসেছে তাইতো কেউ দেখে কিনা এটাই লক্ষ্য করতেছে। এমন সময় শিলার বয়সী একটি ছেলে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে কাউন্টারে প্রবেশ করলো। শিলা তাঁকে দেখে ছুটে গেল তার কাছে, জয় তোমার আসতে এতো সময় লাগলো। আর মাত্র পাঁচ মিনিট বাকি আছে গাড়ি ছাড়ার আমি তো টেনশনে পরে গেছিলাম। তুমি আসবে কি না।।তারপর শিলা একটু দম টেনে নিয়ে ছেলেটির উদ্দেশ্যে বলে, জয় উনি হলেন আমার ফুফাতো ভাই। পিতু ভাই।উনিই আমাদের গাড়ির টিকিট করেছেন।
জয় নামক ছেলেটি আমাকে সালাম দিয়ে হাত বাড়িয়ে দিল। আমি মোসাফা করবার সময় তার হাত ধরলাম, শিলা কথা বলেই যাচ্ছে। পিতু ভাই এ হলো জয়, আমার বন্ধু। জয় খুব ভাল ছেলে, আমরা দুজনে দুজনকে ২ বছর ধরে জানি। ও ঢাকায় বিমান বাহিনীতে চাকুরি করে। আমি জয়কে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করে সুখি হতে পারবোনা পিতু ভাই।
এমন সময় বাসের হেলপার এসে জানালো বাস ছেড়ে দিবে, আসেন। আমরা সবাই বাসের কাছে গেলাম। শিলা জয়ের হাত ধরে গাড়িতে উঠার আগে আমার কাছে আসলো,পিতু ভাই টাকা এনেছেন? ওর না বেতন হতে আরো কয়েকদিন দেরি হবে, আমার পীড়াপীড়িতে আমায় নিয়ে যাচ্ছে। আমি মানিব্যাগ বের করলাম, ব্যাগে হাত দিয়ে যা পেলাম শিলার হাতে ধরিয়ে দিলাম।শিলা ও জয় গাড়িতে উঠে গেল, যাওয়ার সময় শিলা আমার হাত জরিয়ে ধরে বললেন, পিতু ভাই আমাদের আশীর্বাদ করবেন।
0 মন্তব্যসমূহ
মন্তব্য বিষয়ক দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় বহন করবে না।