0000

কম টাকায় গোয়া ভ্রমণ

গোয়া সমুদ্র সৈকত


গোয়ার নাম শুনলে আমাদের মত মিডল ক্লাস মানুষদের মাঝে দুইরকমের প্রতিক্রিয়া তৈরী হয়। প্রথমত স্বপ্ন ঝিলিক দিয়ে উঠে কিন্তু পরক্ষণেই সে স্বপ্ন আবার দপ নিভেও যায়। বিভীন্ন বিষয় চিন্তা করে! সবার আগে মাথায় আসে খরচের চিন্তা! বিশ্ববিখ্যাত সী বিচগুলো সেখানে অবস্থিত,খরচও নিশ্চয় ওইরকম মারমার কাটকাট টাইপের হবে! দীর্ঘ একটা সময় পর্যন্ত আমিও এমনটাই ভেবে এসেছি। ফলে কখনো সেখানে যাওয়ার স্বপ্ন দেখারও সাহস হয়নি। কিন্তু কিছুদিন আগে ট্রাভেল গ্রুপে একটা রিভিউ দেখলাম গোয়া ভ্রমণ নিয়ে। ভদ্রলোককে অসংখ্য ধন্যবাদ। তিনি সেখানে দেখিয়েছেন, কিভাবে স্বল্প খরচে গোয়া থেকে ঘুরে আসা যায়। মূলত তার রিভিউ পড়েই আমার স্বপ্ন পূনরায় ডানা মেলা শুরু করে! মনে মনে বেশ সাহস খুঁজে পাই! তিনি বাংলাদেশ থেকে গোয়া পর্যন্ত খরচ দেখিয়েছিলেন পাঁচ হাজার টাকার মতো। আমি যেহেতু পড়াশোনার জন্য ইণ্ডিয়াতেই থাকি এবং দিল্লীর আশপাশেই। সে হিসেবে আমার খরচত আরও কম হবে নিশ্চয়! সবকিছু ভেবে, ঝটপট তৈরী হয়ে যাই আমরা তিনজন এবং আল্লার অশেষ রহমতে সেই সফর শেষও হয়ে যায় অভাবনীয় সাফল্যের সাথে!জীবনের অবিস্মরণীয় একটা সফর ছিল সেটা! সমূদ্র আমার সবসময়ই অতি প্রিয়। ইতিপূর্বে কক্সবাজর সেন্টমার্টিন গিয়েছিলাম পাঁচবার! এবার দেখে এলাম আরব সমূদ্র! ক্ষূদ্র জীবনের এও এক বিশাল অর্জন!

এই টাকায়ও যে গোয়া (Goa) ভ্রমণ সম্ভব, এটা অনেকে বিশ্বাসই করতে পারছেন না! অবশ্য করতে না পারারই কথা, জায়গাটা যেহেতু গোয়া! কিন্তু বিশ্বাস করুন, সম্ভব! আসলেই সম্ভব, তবে একটু কষ্ট সহ্য করতে হবে, এই আরকি! আমিও বেশ ভালই কষ্ট করেছি কিন্তু কষ্টের পর যা পেয়েছি সে তুলনায় কষ্টটাকে তুচ্ছই মনে হয়েছে! আমি এখানে আমার খরচের হিসাব দিচ্ছি, দেখে নিবেন।

আমরা দিল্লী হজরত নিজামুদ্দীন থেকে দেহরাদূন কচুভেলি এক্সপ্রেসে উঠেছি। এটা সপ্তায় একদিন, সোমবারে, কেরালা যায়। আমরা যেহেতু আগে থেকে টিকিট করি নাই, তৎকালে কাটলে টাকা বেশি লাগবে, তাই ৪০০ রুপি দিয়ে জেনারেলের টিকিট কেটে উঠে বসলাম। প্রায় ৩৪ ঘন্টার সফর জেনারেল বগিতে করাটা কষ্টকর বটে। বিশেষ করে মহিলা কিংবা অনভ্যস্থ হলে তাদের জন্য আরও বেশি কষ্টকর। আমরা অভ্যস্থ হয়ে গেছি, তাই সাহস করে উঠে বসলাম। এজন্য আপনারা যারা অভ্যস্থ না তারা স্লীপারের টিকিট কেটে নিবেন, ৭০০ টাকা লাগবে। পথে কি খরচ করবেন না করবেন, সেটা আপনার উপর নির্ভর করে। আমরা হালকা নাস্তা টাস্তা করেই কাটিয়ে দিয়েছি পুরো সময়। খুব একটা কষ্ট হয় নি।
সোমবার দুপুর দেড়টায় ট্রেনে উঠেছিলাম, মারগাও স্টেশনে গিয়ে নেমেছি মঙ্গলবার রাত সাড়ে দশটায়। এখান থেকে আমাদেরকে যেতে হবে আরামবোল। মারগাও থকে বেশ দূরে। রাত নয়টার পর বাস বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বাধ্য হয়েই একটা রাত মারগাও স্টেশনের পাশের হোটেলে থাকতে হয়েছে। তিনজনে হোটেল ভাড়া পড়েছে ছয়শ রুপি। পরদিন সকালে বাসে করে বাসস্ট্যণ্ড পর্যন্ত গেলাম, ভাড়া জনপ্রতি ১০ রুপি। সেখান থেকে বাসে করে পান্জি। ভাড়া ৪০ রুপি করে। পাঞ্জি থেকে বাসে করে মাপোসা। ভাড়া ১৫ রুপি করে। সেখান থেকে পূনরায় বাসে আরামবোল, ফিশমার্কেট। ভাড়া ৩০ রুপি।
ছবি- সংগৃহীত 

সব মিলিয়ে আড়াই ঘন্টার মতো সময় লেগেছে, ভাড়া লেগেছে নব্বই রুপির মতো। ফিশ মার্কেট নেমে আশপাশেই ভাল হোটেল পাবেন। বেশ কম দামে। আপনি যদি একা হন, তাহলে ডরমিটরি টাপের হোটেলগুলোতে থাকতে পারেন। জনপ্রতি দুইশ করে লাগবে।সেজন্য হোটেল আরামবোল সবচেয়ে ভাল হবে। আমরাও সেখানেই ছিলাম। ফিশমার্কেট নেমে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই দেখিয়ে দেবে। আর দুই তিনজন হলে ভাল হয় একটা রুম নিয়ে নেবেন। সেজন্য আপনাকে প্রথমেই বীচে চলে যেতে হবে। সেখানে গিয়ে দেখতে পাবেন একদম সমূদ্রের তীরে সারি সারি হোটেল আছে। দরদম করে নিলে পাঁচ ছয়শর ভিতরে রুম পেয়ে যাবেন।
পাসপোর্ট বা ড্রাইভিং লাইসেন্স জমা দিয়ে বাইক ভাড়া নিতে পারেন। দিনপ্রতি তিনশ রুপি নেবে। এটা দিয়ে যেখানে খুশি আরামে চলে যেতে পারবেন! আমরা প্রথম দিন আরামবোল ও তার আশপাশের বিচেই ছিলাম সারাদিন। বেশ মজা হয়েছিল। বিকাল ও সন্ধ্যাটাও বিচেই কেটেছে। সে এক অপার্থিব দৃশ্য তৈরী হয় আরব সমূদ্রের তীরে।

গোয়া মূলত সমূদ্র, সী বিচ, প্রাচীনসব চার্চ আর দূর্গের রাজ্য। চারদিকে চার্র আর চার্চ। খোদ ভেনিসেও এতো চার্চ আছে কিনা সন্দেহ! খুব সুন্দর আর পরিপাটি রাস্তাঘাট। ঘরবাড়িগুলো সব ইউরোপিয়ান স্টাইলে নির্মিত। বেশিরভাগই একতলা, দু’তলা। টালির চৌচালা ছাদ। পুরোটা শহরই পাহাড়ের উপর নির্মিত। রাস্তাঘাট সব উঁচু নিচু, ঢালু। ইন্ডিয়ার অন্যান্য রাজ্য আর শহরগুলো থেকে এটা একেবারেই আলাদা,অন্যরকম!

দ্বিতীয় দিন সকালে আমরা চলে গেছি কেরি/কেডি বীচে। ফিশমার্কেট থেকে বাসে দশ টাকা করে লাগে। সেখানে গিয়ে ফেরীতে করে তেরিখালি গ্রামে গেলাম। সমূদ্রের একটি চ্যানেল পাড়ি দিতে হয়। ফেরীর কোন ভাড়া লাগে না। তেরিখালি খুব সুন্দর নিরীবীলি একটি পাহাড়ি গ্রাম। পাহাড়ের গায়ে এসে সমূদ্রের ঢেউ আছড়ে পড়ছে! এই গ্রামে প্রাচীনকালে নির্মীত দুইটি দূর্গ আছে! সেগুলো দেখে আসতে পারবেন।

সেখান থেকে ফিরে আমরা বীচে চলে গেলাম। কেরি বিচটা একটু অন্যরকম। এখানে ঢেউ কিছুটা বেশি এবং জায়গাটাও একটু গভীর! জায়গাটা অত্যন্ত সুন্দর! এখানেই সারাদিন কেটে গেছে। সন্ধ্যায় আবার আরামবোল বিচে ফিরে আসি।

তৃতীয় দিন সকালে আমরা পাঞ্জির উদ্দেশে রওনা করি। সাড়ে নয়টায় আমরা পৌঁছাই সেখানে। সেখান থেকে সাইট সিয়িংয়ের জন্য ট্যুরিস্ট বাস পাওয়া যায়। মাত্র আড়াইশ টাকায় নর্থ গোয়ার সমস্ত প্রসিদ্ধ স্থান ঘুরিয়ে আনবে। এতে আপনার সারাদিন কেটে যাবে।অনেক বীচ, চার্চ আর দূর্গ এর আওতায় পড়বে। কোকো বীচ নিয়ে যাবে। সেখানে আলাদা তিনশ টাকা করে দিয়ে, ডলফিন পয়েন্ট ঘুরিয়ে আনবে বোটে করে। এটা অনেক থ্রিলিং ও মজার একটা জার্নি। বিকালের দিকে বাগা বীচে নিয়ে আসবে। সেখানে ঘন্টা দেড়েক গোসল করার সুযোগ পাবেন। বাকি অন্যান্য জায়গায় কোথায় কী করতে হবে, সব গাইডই বলে দেবে।
দিনশেষে আবার পাঞ্জি ফিরে আসি আমরা। সেখান থেকে বাসে করে মারগাও। প্রায় সাথে সাথেই ট্রেন পেয়ে যাই মুম্বাইয়ের। তাতেই চড়ে বসি। আরামসে এক ঘুম দিয়ে মুম্বাই এসে পৌছে যাই সকাল বেলা। মুম্বাই সারাদিন ঘুরাঘুরি করে সন্ধ্যায় আবার

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Back To Top