কবিতাঃ ০১
চালতা পাতা ও বিবশ লক্ষ্মীপেঁচা
চালতা ফুলের উল্টো পিঠে ঝলমলে রোদ হাসে,
মেঘের চাবুকে অন্ধকারে আড়াল হয় পাতার শিরদাঁড়া
কার্তিকের ভোরে ঝরাপাতার হিসাব লিখে রাখে কুয়াশা
সারাদিন দূরের বনে চলে প্রস্থানের তুমুল শোক
একদিন চালতা ফুলও ঝরে পড়ে শীর্ণ ঘাসের ভেতর...
এইসব বিরহ বিলাস গুনে গুনে ক্লান্ত হয় রাতের লক্ষ্মীপেঁচা!
এখন চালতা পাতা চুইয়ে চুইয়ে কেবল বেদনা ঝরে মনে।
কবিতাঃ ০২
তুমি আমার মরণ
লোকে বলে ওটা তোমার চোখ
আমি বলি অনিন্দ্য সুন্দর চোরাবালি;
ঠিক যেন মৃত্যুর অতল গহ্বর।
লোকে বলে ওটা তোমার গোলাপের মত ঠোঁট
আমি বলি- এই ঠোঁট স্বয়ংক্রিয় এক রাইফেল,
তোমার মুচকি হাসিতে খইয়ের মত বুলেট ফুটে....
লোকে বলে ওটা তোমার মোহনীয় হাসি
আমি বলি তোমার হাসি যেন সামুরাই;
এবং ফাঁসির পিচ্ছিল রশি!
লোকে বলে ওটা তোমার মায়ার গান
আমি বলি- ওটা আমাকে মারার আহ্বান,
লোকে বলে তুমি নাকি আমার প্রেমিকা
আমি বলি- তুমি আমার মরণ, মরণ এবং মরণ!
কবিতাঃ ০৩
আগ্নেয়গিরি চোখ
তোমার চোখ- একটা জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরি
চাহনীতে লাভা ছড়ায়
ইশারায় ছড়ায় উত্তাপ,
সেই উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে বুক থেকে বুকে
উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে শিরা থেকে উপশিরায়
ধমনী থেকে হৃদপিণ্ডে; অলিন্দে অলিন্দে।
তোমার চোখের লেলিহান আগুনে গলে যায়
উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর স্তূপকৃত বরফ পাহাড়
বরফ গলে গলে বেড়ে যাচ্ছে সমুদ্রের জল
তলিয়ে যাচ্ছে সমতল থেকে মনের সাম্রাজ্য
এবং আমিও!
কবিতাঃ ০৪
রুমালের বুননে বুননে প্রেম
আজকাল টিস্যুর কদর বেড়েছে খুব
এইযে কপাল চুইয়ে নেমে আসা ঘাম
প্রেমিকার ঠোঁটের লিপস্টিকে আঁকা স্পর্শ চিত্র
কিংবা লাঠালাঠির আঘাতে রক্তের ফিনকি,
এমন কী প্রাক্তনকে মুছে ফেলার মত যাদুকরী বস্তু; টিস্যু!
উত্তরাধুনিক এই সমাজে প্রেম এখন সহজ ও সহজলভ্য
অতীত মুছের ফেলার মত ইরেজারও পাওয়া যায় সুলভে!
কেবল আমিই পারিনা; বড্ড সেকেলে,
তোমার মায়ার হাতে রঙিন সুতার বুননে লেখা-
'যাও পাখি বলো তারে / সে যেন ভুলে না মোরে'
আমি তোমাকে ভুলিনি
আজও রুমালটা সযতনে পকেটে তুলে রাখি
আমার মনটা হঠাৎ উড়াল হলে তোমার স্পর্শ খুঁজি...
মাধবপুর, হবিগঞ্জ।
0 মন্তব্যসমূহ
মন্তব্য বিষয়ক দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় বহন করবে না।