0000

মাত্র ৬৫০০ টাকায়, ঢাকা- শিলিগুড়ি-দার্জিলিং-সান্দাকফু ট্রেক ভ্রমণ

 

টোটাল সময় =৬ রাত ৫ দিন।

(এই ট্যুর প্ল্যান কেবল বাজেট ট্রাভেলারদের জন্য প্রযোজ্য)

ভ্রমণের বিবরণ:
আমরা তিন বন্ধু-ছোট ভাই মিলে ৯ ডিসেম্বর রাতে পঞ্চগড়ের ট্রেনে উঠি।(ট্রেনের টিকিট ৫৫০টাকা)। ট্রেন ছাড়ে রাত ৮টায়।
ডিসেম্বরের ১০ তারিখ সকালে পঞ্চগড় পৌছাতে আমাদের অনেক দেরি হয়ে যায়।পঞ্চগড় থেকে বাংলাবান্ধা যাই ৭০ টাকা বাস ভাড়া দিয়ে। বাসস্ট্যান্ড থেকে অটোতে ১০ টাকা দিয়ে বর্ডারে যাই। বাংলাদেশ বর্ডারের কাজ শেষ করে ডুকে যাই ভারতের বর্ডারে। আমরা বর্ডারে কিছু হাদিয়া দিয়ে কাজ শেষ করি।
পাশে থেকেই টাকা রুপি করে নেই। সেখান থেকে ১০ টাকা অটোতে করে ফুলবাড়ী বাজার যাই।সেখান থেকে অটোতে ২৫ রুপি দিয়ে শিলিগুড়ি জংশন যাই।

আপনি জংশন থেকে শেয়ার্ড জীপে করে মানেভঞ্জন যেতে পারবেন কিন্তু সকাল ১২/১১ টার পর আর পাবেন না।তবে রিজার্ভ জীপ সব সময় পাবেন আমাদের বিকেল হয়ে যাওয়ায় আমরা শেয়ারিংয়ে ১৫০ রুপি দিয়ে দার্জিলিং চলে যাই। দার্জিলিংয়ে আমরা ৮০০ রুপি দিয়ে হোটেলে ১০ তারিখ রাত কাটাই। রাতে দার্জিলিং শহর ঘুরে দেখি।

১১ তারিখ সকাল ৬টায় উঠে শেয়ার্ড জীপে ৭০ রুপি মানেভঞ্জন চলে যাই।চেকপোস্টে এন্ট্রি করে গাইড এজেন্সি থেকে ৪ হাজার রুপি দিয়ে ৪ দিনের জন্য গাইড ঠিক করে ট্রেকিং শুরু করে দেই।
(৪ দিনের গাইডের টাকা আপনাকে আগেই দিতে হবে। পরে অতিরিক্ত ১/২ দিন বেশি লাগলে সে দিনের টাকা গাইডের হাতে দিতে হবে। শুধু সান্দাকফু আর ফালুটে গাইডের ডিনার খরচ আপনাদের দিতে হবে।)
ট্রেকিং করার মজাটা উপভোগ করা শুরু করে দেই। আহা কি এক শান্তিতে মিশে যেতে থাকি আস্তে আস্তে।

কুয়াশার ভিতর দিয়ে আমরা চারজন(গাইডসহ) ট্রেকিং করে ১৬ কিমি শেষ করি ১ম দিনে। সকাল থেকে আমরা চারজন মিলে শুধু ৩ পেকেট বিস্কুট খেয়েছি। খাওয়ার কথা আসলে মনেই থাকে না এমন জায়গায় গেলে।
ঝাউবাড়ী নামে একটা নেপালি গ্রামে পৌঁছে রাতে ১৪০ রুপি দিয়ে ভাত- সবজি -ডাল খেয়ে নেই। ২০০ রুপি দিয়ে ১১ তারিখ রাত সেখানেই কাটাই।সেদিনও কোন স্নোফল হয়নি।তবে প্রচুর শীত ছিল।

পরদিন ১২ তারিখ সকাল ৭ টায় ঘুম হতে উঠে ট্রেকিং শুরু করি। আজকে সামিট করার টার্গেট করি। এই ২য় দিনে আমাদের ১৫ কিমি যেতে হবে।
আজকের ট্রেকিংটা আরো বেশি ভাল লাগে। কি আকাবাকা পথ! কিছুক্ষণ ইন্ডিয়ায় হাটছি তো কিছুক্ষণ নেপালে। আহা কিভাবে বুঝাবো সেই অনুভূতি!

সকাল ১০টায় নেপালের আরেকটা পাড়ায় গিয়ে আমরা ৫০ রুপি করে ন্যুডলস খেয়ে আবার ট্রেকিং শুরু করে দেই। অতঃপর দুপুর ১.৪৬ মিনিটে আমরা ১৫ কি.মি শেষ করে স্বপ্নের সান্দাকফুর চূড়ায় পা রাখি। আহা কি আনন্দের হাসি সবার মুখে!
৩৬৬৫ মিটার উপরে চলে আসলাম দুদিন ট্রেক করে! কি এক উল্লাস ভিতরে!
নেপালের ইলাম জেলা এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ চূড়ায় আমরা! তবে কুয়াশার জন্য তখনো এভারেস্টের ভিউ পাইনি।
কিছুক্ষণ উল্লাস করে ২০০ রুপি দিয়ে কটেজ ঠিক করে ১ ঘন্টা বিশ্রাম নেই। ১ঘন্টা পর বাহিরে গিয়েই অবাক হই। যেটা আশাও করি নাই তাই দেখতে পেলাম। স্নোফল হচ্ছে। সেদিন সন্ধ্যায় এই বছরের প্রথম স্নোফল শুরু হয়।
স্নোতে কিছুক্ষণ লাফালাফি করে ফিরে যাই কটেজে। ১৭০ রুপি দিয়ে খিচুড়ি খেয়ে ঘুমিয়ে পরি।
১২ তারিখ রাত আমরা সান্দাকফু থাকি।

১৩ তারিখ সকালে উঠে বাহিরে গিয়ে তো হতভম্ব! এতো স্নো! চারো দিক শুধু সাদা আর সাদা! অর্ধ পা অবধি স্নো জমে আছে। কিছুক্ষণ উল্লাস করে কটেজে চলে আসি।
আমাদের গাইড বলল আজ আর ফালুট যাওয়া সম্ভব না তাই আমাদের একই রুট দিয়ে ব্যাক করা উচিৎ। তার কথা শুনেই আমরা একই রুটে নামতে শুরু করি। তিশেরিং ছিল অনেক ভাল একটা গাইড। তার চেয়ে ভাল গাইড খুব কমই হয়।
আমরা তুমলিং পর্যন্ত যাওয়ার ইচ্ছা করি আজ। নিচে নামতে থাকি আর পাহাড়ের সৌন্দর্য দেখে অবাক হতে থাকি। বিকালের মধ্যে তুমলিং পৌঁছে যাই। তুমলিংয়ের পথে এভারেস্ট, কাঞ্চনজঞ্জাকে পাশে নিয়ে হাটতে যে কি আনন্দ তা বলার ভাষা নেই। কি সুন্দর ভিউ পেয়েছিলাম এই দিনে আমি লিখে বুজাতে পারবো না।এই ১৩/১২/১৯ তারিখটা আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর দিনগুলোর একটি।তুমলিংয়ে ১৬০রুপি দিয়ে খেয়ে ২০০ রুপি দিয়ে পারপার্সন কটেজে থেকে যাই।


ডিসেম্বরের ১৪ তারিখ ফেরত যাত্রা:

১৪ তারিখ সকালে আমরা তুমলিং থেকে বের হয়ে যাই। ১১ টার মধ্যে আমরা পৌঁছে যাই মানেভঞ্জন। মানেভঞ্জন থেকে শেয়ারিং জীপে ৩০০ রুপি দিয়ে চলে আসি শিলিগুড়ি জংশন। জংশন থেকে ২০ রুপি অটোতে করে চলে আসি ফুলবাড়ি বাজার। বাজার থেকে ১০ রুপি অটোতে করে বর্ডার। বর্ডারে রুপিকে টাকায় কনভার্ট করে নেই। ইন্ডিয়া বর্ডারে ২০০ টাকা হাদিয়া নেন তারা। অতঃপর বাংলাদেশে প্রবেশ করি। বাংলাবান্ধা থেকে ৫০ টাকা দিয়ে বাসে করে পঞ্চগড় রেলস্টেশনে আসি। ৫৫০ টাকায় টিকিট কেটে ১৫ ডিসেম্বর সকালে যাদুর শহর ঢাকায় চলে আসি।


সম্পূর্ণ ট্রিপের বিস্তারিত খরচঃ

(৯ তারিখ রাত)ঃ
ঢাকা টু পঞ্চগড় টু বাংলাবান্ধা=৬২০টাকা

(১০তারিখ) ঃ
উভয় বর্ডার খরচ =৩০০ টাকা।
অটো+শিলিগুড়ি টু দার্জিলিং=১৭৫রুপি।
দার্জিলিংয়ে থাকা+খাওয়া=৩৫০ রুপি।

(১১ তারিখ) ঃ
দার্জিলিং টু মানেভঞ্জন= ৭০ রুপি।
গাইড খরচ(বকশিশও সান্দাকফুতে ডিনারসহ)= ১৫০০রুপি
হালকা নাস্তা+রাতের খাবার+কটেজ =৩৮০রুপি।

(১২ তারিখ) ঃ
সকালে হালকা নাস্তা+দুপুরে খাবার+ রাতে খাবার+ কটেজ ভাড়া= ৪৮০ রুপি।

(১৩ তারিখ) ঃ
সকালের নাস্তা+দুপুরে হালকা খাবার +রাতে ডিনার +কটেজ ভাড়া=৬২০রুপি।

(১৪ তারিখ) ঃ
সকালের নাস্তা+ রাতের ডিনার=১৮০রুপি।
মানেভঞ্জন টু শিলিগুড়ি টু ফুলবাড়ি বর্ডার=৩৩৫ রুপি।
বর্ডার খরচ = ২৫০ রুপি।
বাংলাবান্ধা টু ঢাকা =৬০০ রুপি।

মোট জনপ্রতি খরচ=৫৮৬০ রুপি।


কিছু বিষয় মনে রাখলে ভাল হয়:

* ভাল শীতের কাপড় আর ভাল জুতা নিয়ে যাবেন। তবে ব্যাগ বেশি ভারী যাতে না হয় সেদিকেও লক্ষ রাখবেন।

* টাকা কিছু বেশি নিয়ে যাবেন অবশ্যই। সবার খরচ আপনার খরচ এক না।

*সবাই এক সাথে ট্রেক করার ট্রাই করবেন। কেউ যেনো খুব পিছে থেকে না যায়।

* আমরা দুদিনে সামিট করেছি বলে আপনাকেও তাই করতে হবে এমন না ভাই। আপনার দক্ষতা অনুযায়ী আপনি ট্রেক করবেন। এখন যে কয়দিন লাগে। অনেকে ১ম রাত টুমলিং থাকে ২য় রাত কালাপোখড়ি থাকে ৩য় রাত সান্দাকফু। এভাবেও প্ল্যান করতে পারেন।

* পাহাড়ে কখনো মধ্যপান করবেন না। এক্সিডেন্টের কথা কেউ বলতে পারবে না।

*১০০% সতর্ক থাকতে হবে। কারো আগে যাবার জন্য তাড়াহুড়ো করবেন না। এতে বিপদ ঘটতে পারে। মনে রাখতে হবে ফ্যামিলী আমার জন্য বাসায় অপেক্ষা করছে।

মনে রাখা আবশ্যক :

সেই ট্রেকে কেউ ময়লা ফেলে না। মানুষ ময়লা ফেলার জায়গায় ময়লা ফেলে। মনে রাখবেন আপনিও মানুষ। প্রকৃতির সাথে আমরা বেঈমানী করবো না।

অনেকে দেশের বাইরে গিয়ে ময়লা ঠিক জাগায় ফেলে বাট বাংলাদেশে এসে যেখানে সেখানে ময়লা ফেলে। ভাই নিজের দেশটাকেও পরিস্কার রাখুন প্লিজ।

©আদনান শরীফ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Back To Top