0000

নদী কথন: নদীর নাম অর্জুনডারা

 

বাঞ্চারাম গ্রামের পাশে অর্জুনডারা নদী

সম্প্রতি হাইকোর্ট দেশের সব নদ-নদীকে জীবন্ত সত্তা হিসাবে ঘোষণা করেছে। অভিনন্দন জানাই। কিন্তু সমস্যা হলো আমাদের দেশে কোনটা নদী আর কোনটা নদী নয় সে বিষয়ে এখনো স্পষ্ট কোন ব্যাখ্যা নেই। নেই কোন নীতিমালা। সেসব দীর্ঘ আলোচনার বিষয়।


অর্জুনডারা নদী ধরলার একটি শাখা নদী। কিন্তু ডারা কিভাবে নদী হয়? সেই প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে তো! কোন সমস্যা নেই। ডারা বলতে বুঝায় ছোট নদী। অর্থ্যাৎ ছোট ছোট নদীকে ডারা বলে। কিন্তু ছোট নদী হলেই সেইটা ডারা হবে না। ডারার একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, ডারা হতে হলে একটি বড় নদী থেকে অন্য নদীর মধ্যে পানি আদান প্রদানের করতে হবে। অর্থ্যাৎ দুইটি নদীর পানি আদান প্রদান তথা জল প্রবাহের পথকে ডারা বলে।


অর্জুনডারা নদীটি কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নের উত্তর-পূর্বদিকে অবস্থিত পুরাতন ধরলা নদী থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। উৎপত্তি স্থানে নদীটির নাম খলিশাকুড়ি।

কাঁঠালবাড়ি ডিগ্রি কলেজ সংলগ্ন -খলিশাকুড়ি নদী


অতঃপর নদীটি কাঁঠালবাড়ি ডিগ্রি কলেজ ও কাঁঠালবাড়ি ঈদগাহ মাঠের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। অর্জুনডারা নদীটি কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার বেলগাছা ইউনিয়নের  কালিরহাট বাজারের পশ্চিম দিক দিয়ে যতিনেরহাট নামক স্থানের দিকে প্রবাহিত হয়। উক্ত স্থানে নদীটির নাম শিয়ালডুবি,অর্জুনডারা। নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার।


জনশ্রুতি রয়েছে যে, পূর্বে এই অর্জুনডারা নদী দিয়ে পালতোলা নৌকায় করে বুড়াবুড়ি, বেগমগঞ্জ, মোগলবাসা ইউনিয়নের মানুষ আসতো যতিনেরহাট বাজারে বাজার করতে। সে সময়ে সাড়িসাড়ি পালতোলা নৌকা এতো বেশী ভীড় করতো যতিনেরহাট বাজারে যে, উক্ত বাজারের নাম নাইয়ার হাট বলেও অনেকে ডাকতে থাকেন। পরবর্তী সময়ে নাইয়ার হাট লোকমুখে বিবর্তন লাভ করে হয় নাউয়ার হাট। যা এখনো অনেকের মুখে শুনা যায়। যতিনেরহাট বাজারের দক্ষিণ দিকে অর্জুনডারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে একটি বিদ্যালয় রয়েছে।


যাই হোক, অর্জুনডারা নদী উৎপত্তি স্থান কাঁঠালবাড়ি থেকে এঁকেবেঁকে ৩০ কিলোমিটার ভাটিতে এসে মোঘলবাসা ইউনিয়নের ভিতর দিয়ে পুনরায় বর্তমানের প্রবাহমান ধরলা নদীতে পতিত হয়েছে। ধরলা ও অর্জুনডারা নদীর সঙ্গমস্থলের পাশের গ্রামের নাম খামার।যা মোঘলবাসা ইউনিয়নে অবস্থিত।

এই ছোট নদীটি পুরাতন ধরলা থেকে বর্তমানের প্রবাহমান ধরলার পানি প্রবাহের পথ হওয়ায় এটাকে ডারা নদী বলা হয়। আর তার নাম অর্জুনডারা নদী। যেহেতু নদীটির উৎপত্তি নদী এখন প্রায় মরা বিলে পরিনত হয়েছে তাই বর্ষা মৌসুম ছাড়া অন্য সময়ে অর্জুনডারা নদী কোথাও রবীন্দ্রনাথের ছোটনদীর মতো হাটুজল আবার কোথাও কোথাও সম্পূর্ণ শুকিয়ে যায়। তবে বর্ষা মৌসুমে নদীটির দুইতীর পানিতে কানায় কানায় টইটুম্বুর হয়ে থাকে।

অর্জুনডারা নদীর পাড়ে লেখক। ছবি- হৃদয় রায়


লেখক- জাহানুর রহমান খোকন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

2 মন্তব্যসমূহ

  1. চাচ্চু, লেখা ভাল হইছে। কিন্তু এই নদীটার নাম 'বুড়িতিস্তা' না?

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. না। এই নদীর নাম অর্জুনডারা নদী।
      বুড়িতিস্তা উলিপুরের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে যাওয়া নদী

      মুছুন

মন্তব্য বিষয়ক দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় বহন করবে না।

Back To Top