0000

এক নজরে উলিপুর মুন্সিবাড়ি

উলিপুর ধরণীবাড়ি মুন্সিবাড়ি     ছবি: লেখক


ইতিহাসের গন্ধ আছে বলেই মানুষ পোড়াবাড়ি দেখতে যায়, নতুবা কেউ ফিরেও তাকাতো না। ইতিহাস ও অস্তিত্ব যেন একই সূত্রে গাথা। হয় আপনি ইতিহাস সৃষ্টি করুন নতুবা ইতিহাস জানুন। জ্ঞানী ব্যক্তিবর্গ ইতিহাসের সাথেই যায় অর্থ্যাৎ ইতিহাস সৃষ্টি করেন। আমি অধম ইতিহাস চর্চা করি(পাঠ করি)। এবং পাঠক সৃষ্টির চেষ্টা করি।

স্বাভাবিক প্রথা অনুসারে ইতিহাসবেত্তাগণ ইতিহাসের লিখিত উপাদানের মাধ্যমে বিভিন্ন ঐতিহাসিক প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করেন, যদিও কেবল লিখিত উপাদান হতে ইতিহাসে সকল তত্ত্ব উদ্ধার করা সম্ভব নয়। তবে নির্ভরযোগ্য উৎস হিসেবে লিখিত উপাদান সর্বজন স্বীকৃত। এই লেখাটিও সেরকম একটি চেষ্টামাত্র।


উলিপুর মুন্সিবাড়ি:

কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার ধরনীবাড়ী ইউনিয়নে উলিপুর মুন্সিবাড়ীর (Ulipur Munshi Bari) অবস্থিত। উলিপুর বাজার থেকে মাত্র ২ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিক দূরে এই ঐতিহাসিক মুন্সিবাড়ি অবস্থিত। প্রায় ৩৯ একর জায়গার উপর মুন্সিবাড়ির বিশাল অট্টালিকাগুলো এখনো জরাজীর্ণ অবস্থায় কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আঠারো শতকে বিনোদী লালের পালক পুত্র শ্রী ব্রজেন্দ্র লাল মুন্সির তত্ত্বাবধানে চমৎকার স্থাপত্যের এই মুন্সিবাড়িটি নির্মিত হয়। মুন্সিবাড়িটির মূল ভবনে আছে শয়ন কক্ষ, ডাইনিং হল, রান্নাঘর, অঙ্কন কক্ষ, বিশ্রাম ঘর এবং অতিথিশালা। মুন্সিবাড়ির ভবনগুলো পুরাতন হলেও অনেক আধুনিক নকশার সমন্বয়ে তৈরি করা।মুন্সিবাড়িটি বর্তমান সময়েও অনেক আধুনিক স্থাপত্যকে হার মানাবে।

মূল বাড়ির পিছনের দিকে একটি শিব মন্দির, উন্মুক্ত দোল মঞ্চ, তুলসি বেদী, নাট মন্দির, দূর্গা মন্দির ও খোলা কূপসহ স্নানাগার রয়েছে। যা যত্ন ও অবহেলায় ধ্বংশপ্রায় অবস্থায় পরিত্যাক্ত হয়ে আছে। তবে মূল ফটকের পাশে আছে কাঁঠালি চাপা ফুলের গাছ এবং সামনে শান বাঁধানো পুকুর ঘাট রয়েছে। এবং সামনের দিকে একটি হাতিশাল রয়েছে।

উলিপুর মুন্সিবাড়িতে লেখক

ইতিহাস থেকে জানা যায়, কাশিম বাজারের ৭ম জমিদার কৃষ্ণনাথ নন্দীর মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী মহারানী স্বর্নময়ী দেবীর অধীনে হিসাব রক্ষকের কাজ করতো বিনোদী লাল নামের এক মুনসেফ বা মুন্সি। কথিত আছে, একদিন বিনোদী লাল মুন্সি শিকার করতে গিয়ে বর্তমানের মুন্সিবাড়ি স্থানে একটি ব্যাঙের সাপ ধরে খাওয়ার দৃশ্য দেখতে পান। আগেকার দিনে মানুষেরা বিশ্বাস করতেন(মিথ) যে-স্থানে ব্যাঙ সাপকে ধরে খায় সেই স্থানে বাড়ি করলে অনেক ধন সম্পত্তির মালিক হওয়া যায়। তাই বিনোদী লাল মহারানী স্বর্নময়ীর কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে এই স্থানে একটি বাড়ি নির্মাণ করেন। এরপর ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় মুন্সিলালের বংশধররা কলকাতায় চলে গেলে বেশ কয়েকবার বাড়ির মালিকানা বদল হয়। বর্তমানে উলিপুর মুন্সিবাড়িটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে নিবন্ধিত আছে। আর মূল ভবনের দুইটি কক্ষ ধরনীবাড়ি ইউনিয়ন ভূমি অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এবং মুন্সিবাড়ির পিছনের মাঠে ভূমি অফিসের নতুন করে একটি ভবন তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া বর্তমানেও মুন্সিবাড়ির গোবিন্দ মন্দিরে প্রতিদিন পূজা আর্চনা করা হচ্ছে।

প্রতিদিন জেলা ও জেলার বাইরে থেকে অনেক ভ্রমণ পিপাসু ও দর্শনার্থী উলিপুর মুন্সিবাড়ি দেখতে আসেন।

মুন্সিবাড়িটির জমির মালিকানা নিয়ে এখনো আদালতে বিভিন্ন কাগজপত্র চালাচালি হলেও সংরক্ষণ ও সংস্কারের অভাবে মুন্সিবাড়িটি এখন দিনদিন ধ্বংশ হচ্ছে। অথচ উলিপুর মুন্সিবাড়ি হতে পারতো উলিপুর তথা কুড়িগ্রাম জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য গবেষণা কেন্দ্র এবং দর্শণীয় স্থান।

লেখক- জাহানুর রহমান খোকন

কুড়িগ্রাম, বাংলাদেশ।

মুন্সিবাড়ির একাংশ ও গোবিন্দ মন্দির


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

6 মন্তব্যসমূহ

  1. উলিপুর মুন্সিবাড়ির ইতিহাস একটু একটু জানতাম। এই লেখা পড়ে পুনরায় ভালো করে জানা হলো। ধন্যবাদ লেখককে।

    উত্তরমুছুন
  2. আজ অল্প সময় পেয়েছি মুন্সি বাড়ি সম্পর্কে জানতে। সময় সল্পতায় বেশি জানা হয়নি। আপনার লেখনি পড়ে কিছুটা স্বাভাবিক হলো।

    উত্তরমুছুন
  3. রোমেনা খাতুনজুন ২৩, ২০২১

    এইসব হিন্দু-মালাউনদের ইতিহাস আপনি তুলে ধরছেন কেন? উলিপুরে কি কোন ঐতিহাসিক মসজিদ নেই। হিন্দুরা যেসব মসজিদ ভেঙে মন্দির বানিয়েছে, সেসবের কথা গুপন রাখছেন কেন? আপনি কি ভারতের দালাল, র এর এজেন্ট?

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. মামুন শাহরিয়ারজুলাই ১৪, ২০২১

      এই শালার সম্পাদক যে হিন্দুদের দালাল তা এখনও বোঝেননি? রোমেনা খাতুন, জান্নাতী বোন আমার, এইসব মুশরিকদের কার্যক্রম থেকে দূরে থাকুন।

      মুছুন
  4. তথ্যমূলক প্রতিবেদন সুন্দর হয়েছে৷ কিন্তু ভাই আমি তো জানি ফার্সি ভাষার গ্যানীদের মুন্সী বলে৷ আর আপনি লিখেন মুন্সেফ থেকে মুন্সী৷ কোনটা সটিক ক্লিয়ার করেন৷

    উত্তরমুছুন

মন্তব্য বিষয়ক দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় বহন করবে না।

Back To Top