0000

নদী কথন: নদীর নাম বারোমাসি || জাহানুর র. খোকন

 


বারোমাসি একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। কেন নদীটির এরকম অদ্ভূদ নামকরণ এ নিয়ে ঐতিহাসিক কোন তথ্য প্রমাণ না থাকলেও স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, এই নদীতে বছরের প্রায় ১২ মাস পানি থাকে তাই এই নদীর নাম বারোমাসি। সত্যি অবাক হওয়ার মতো তথ্য বটে। যখন দেশের তিস্তা,ধরলা এবং ব্রহ্মপুত্র নদের পানির প্রবাহ খরা মৌসুমে কমে যায় সেখানে রক্তনালি সদৃশ্য এই জলপ্রবাহে পানি থাকে বছরের পর বছর। এবং তা প্রায় বছরের বারোমাস স্রোতধারা সমৃদ্ধ অবস্থায় প্রবাহিত হয়।

বলছিলাম, কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ি উপজেলার বারোমাসি নদীর কথা। নদীটি ফুলবাড়ি উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের গোরকমন্ডল বিজিবি ক্যাম্পের পূর্বদিকে বালাটারী গ্রাম এবং পশ্চিমদিকে কৃষ্ণানন্দবকসী গ্রাম দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। কৃষ্ণানন্দবকসী গ্রাম দিয়ে প্রবেশ করা মুখটির পানির উৎস ভারতের গিতলদহ বিল। যা কালাকাটা কনামুক্ত এলাকায় অবস্থিত। অন্যদিকে গোরকমন্ডল বালাটারী গ্রামের ভিতর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করা নদী শাখাটির পানির উৎস সুদূর কোচবিহার জেলার মধ্যদিয়ে প্রবাহিত হওয়া তোর্সা নদী। যা তোর্সা নদী থেকে ভারতের কোচবিহার জেলার পানিগ্রাম ঘুঘুমারী এলাকা থেকে একটি ছোট্ট শাখা আকারে প্রবাহিত হয়ে  আসছে। নদীটির উৎসমুখ প্রবাহমান নদীর সাথে সংযুক্ত থাকায় এই বারোমাসি নদীতে বছরের বারোমাস পানির প্রবাহধারা দেখা যায়।

শেখ হাসিনা সেতুর উত্তর-পূর্ব অংশ বারোমাসী নদী


নদীটি নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করলেও এটা নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের দক্ষিণদিকে শিমুলবাড়ি ইউনিয়নের হালডাঙ্গারপার গ্রামের ভিতর দিয়ে ধরলা নদীর সাথে মিলিত হয়েছে।  ফুলবাড়ি উপজেলায় অবস্থিত শেখ হাসিনা ধরলা সেতুর দক্ষিণ পশ্চিম প্রান্ত ধরলা নদীর মধ্য হলেও সেতুটির উত্তর-পূর্ব প্রান্ত বারোমাসি নদীর উপর অবস্থিত। শেখ হাসিনা সেতুর উত্তর-পূর্ব প্রান্তে দাঁড়ালে দুইটি জলধারা চোখে পরবে। যার একটি দুধের মতো স্বচ্ছ এবং অন্যটি ঘোলাটে। দুধের মতো স্বচ্ছ জলধারাটি হলো বারোমাসি নদী। বারোমাসি নদীতে নৌকা চলে। নদীতে সারা বছর প্রচুর পরিমানে মাছ পাওয়া যায়। বর্ষার শেষের দিকে শিমুলবাড়ি ইউনিয়নের মিয়াপাড়া গ্রামের এবং পাশ্ববর্তী অঞ্চলের মানুষ পলো জাল নিয়ে দলবেধে এই বারোমাসি নদীতে মাছ ধরতে আসে। যা উৎসবে রুপ নেয়। 

বাংলাদেশ অংশে বারোমাসি নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ৮ কিলোমিটার। বারোমাসি নদী আন্তঃসীমান্ত নদী হলেও ভারত বাংলাদেশ আন্তঃসীমান্ত নদী তালিকায় এই নদীর নাম নেই। এমনকী বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নদী তালিকায় বারোমাসি নদীর নাম নেই। কুড়িগ্রাম জেলায় এরকম প্রায় অর্ধশতাধিক নদ-নদী রয়েছে যেগুলো পানি উন্নয়ন বোর্ডের তালিকাভুক্ত করে নদী রক্ষায় সকলের এগিয়ে আসা সময়ের দাবী। কারণ নদী বাঁচলে দেশ বাঁচবে। আর দেশ বাঁচলেই কেবল আপনি আমি ও আমরা বাঁচবো।

    বারোমাসি নদীতে লেখক

নদী কথক-
জাহানুর রহমান খোকন
কুড়িগ্রাম, বাংলাদেশ।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Back To Top