0000

নদী কথন: নদীর নাম হলহলিয়া || জাহানুর র. খোকন


বাংলাদেশে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত অভিন্ন ৫৭ টি নদ-নদী রয়েছে। তারমধ্যে ভারতের সাথে রয়েছে ৫৪ টি আর মিয়ানমারের সাথে সংযোগ রয়েছে ৩ টি নদীর।কুড়িগ্রাম জেলায় ছোট বড় প্রায় অর্ধশতাধিক নদ-নদী রয়েছে। তারমধ্যে বাংলাদেশ ভারত অভিন্ন নদীর সংখ্যাই বেশী। যদিও ভারত স্বীকৃত এসব নদীর মধ্যে আন্তঃসীমান্ত নদ-নদীর সংখ্যা নেহায়েত কম। এসব নদ-নদীর অনেকগুলো আবার বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডেরও তালিকাভুক্ত নয়। ফলে এসব নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা ভারতের কাছে যেমন আমরা দাবী করতে পারি না, তেমনিভাবে ভারত তাদের প্রয়োজনে এসব নদীতে পানি ছাড়ে আবার তাদের প্রয়োজনে এসব নদীর পানি প্রত্যাহার করে নেয়। মোদ্দা কথা এসব নদ-নদী ভারত বাংলাদেশ আন্তঃসীমান্ত নদী হলেও এই নদীর পানি বন্টন ব্যবস্থাপনার চাবী ভারতের হাতে।
পাখিউড়া ব্রীজের ভাটিতে হলহলিয়া নদী।  ছবি: লেখক

হলহলিয়া তেমনি একটি আন্তঃসীমান্তীয় নদী। নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকৃতি। হলহলিয়া কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলার দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নের ডিগ্রির চর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। ভারতীয় অংশে হলহলিয়া নদীর পাশ্ববর্তী গ্রামের নাম কামারপাড়া। যা আন্তর্জাতিক পিলার ১০৫৪ এর কাছে অবস্থিত। ১৯৮৮ সালের পূর্বে হলহলিয়া নদীর নাম ছিল জিঞ্জিরাম হলহলিয়া। নদীটি বারোমাসি নদী ছিল। এবং সারা বছর প্রচুর পরিমানে পানি বহন করতো। ১৯৮৮ সালের বন্যার পর ভারত সরকার কামারপাড়া এলাকার কাছে হলহলিয়া নদীতে একটি স্থায়ী বাঁধ নির্মান করেন এবং হলহলিয়ার পানি প্রবাহ অন্য দিক দিয়ে প্রবাহিত করে নিয়ে যান। কিন্তু ১৯৯৮ সালে ব্রহ্মপুত্রের পানি প্রবাহ তুলনামূলক বেশী বৃদ্ধি পাওয়ায় হলহলিয়ার বাঁধের একটু পশ্চিম দক্ষিণ দিক দিয়ে ব্রহ্মপুত্রের একটি নতুন ধারা প্রবাহিত হয়। যা পূর্বের হলহলিয়া নদীর সাথে মিলিত হয়।। যার নাম হয় হলহলিয়া। অর্থ্যাৎ হলহলিয়া নদী ভারত অংশে ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। হলহলিয়া নদীটি ক্ষিপ্রতায় অন্যান্য নদীর তুলনায় তীব্র। বর্ষা মৌসুমে হলহলিয়া নদীর স্রোত ক্ষিপ্রবেগে প্রবাহিত হয়। যার ফলে হলহলিয়া তীরবর্তী অঞ্চলে ভাঙ্গন প্রচুর। হলহলিয়া নদীর গড় গভীরতা ৭ ফিট প্রায়। তবে নদীটি প্রস্থে কোথাও কোথাও ২০০ মিটার। হলহলিয়া নদীতে বারোমাস ডিঙ্গি নৌকা চললেও ইঞ্জিনচালিত বড় নৌকা চলে শুধুমাত্র বর্ষা মৌসুমে। কারণ হলহলিয়া নদী বছরের পর বছর অবহেলা, প্রচুর পলি বহণ এবং নদীর দুই তীর ভাঙ্গনের ফলে এর তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। ফলে নদীটি বারোমাসি প্রকৃতি হারিয়ে মৌসুমি নদীতে পরিনত হচ্ছে। উত্তর-পূর্ব দিকে ভারতীয় পাহাড়ের পাদদেশ এবং ভাটিতে ব্রহ্মপুত্রের মিলনের ফলে বছরের প্রায় বারোমাস হলহলিয়া নদীতে প্রচুর মাছ থাকে। যা হলহলিয়া তীরবর্তী অঞ্চলের মানুষের আমিষের চাহিদা মেটায়।

হলহলিয়া নদীতে মাছ শিকারের ফাঁদ। ছবি: লেখক

হলহলিয়া নদী রৌমারী উপজেলা শহরের সাথে চর শৈলমারী ইউনিয়ন, শৈলমারী ইউনিয়ন এবং বন্দবেড় ইউনিয়নের কিয়দাংশকে পৃথক করে রেখেছে। ফলে উক্ত ইউনিয়নের সাথে উপজেলা শহরের সংযোগ স্থাপনের জন্য হলহলিয়া নদীতে পাখিউড়া ব্রীজ স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিবছর নদীর গভীরতা যতো হ্রাস পাচ্ছে ততোই হলহলিয়া নদী তার আসল বৈশিষ্ট্য হারিয়ে আগ্রাসী রুপ লাভ করতেছে। ফলে বর্ষা মৌসুমে নদীর দুই তীরে প্রচুর ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়। এমতাবস্থায় যদি হলহলিয়া নদী খনন কিংবা নদী শাসন ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হয় তবে নিকট ভবিষ্যতে হলহলিয়া নদী রৌমারী উপজেলার দুঃখ হবে।

 হলহলিয়া নদী বাংলাদেশ অংশে প্রায় ১৬ কিলোমিটার সর্পিলাকার ভাবে প্রবাহিত হয়েছে। ভারত থেকে বাংলাদেশের দাঁতভাঙ্গা ডিগ্রির চরে প্রবেশের পর রৌমারী উপজেলার বন্দবেড় ইউনিয়নের ফলুয়ারঘাটের দক্ষিণে ব্রহ্মপুত্র নদের সাথে মিলনের মাধ্যমে হলহলিয়া নদী শেষ হয়েছে।

হলহলিয়া নদী তীরে লেখকের সেল্ফি



লেখক

জাহানুর রহমান খোকন

কুড়িগ্রাম, বাংলাদেশ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Back To Top