0000

ভ্রাম্যমান গ্রন্থাগার, খাতুনিয়া সার্কুলেটিং লাইব্রেরী, রংপুর ও মৌলভী খেরাজ আলী || রবীন জাকারিয়া



ভ্রাম্যমাণ গ্রন্থাগার হলো এমন কোনো বাহন (সাধারণত বাস), যা গ্রন্থাগার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বাহনগুলো বিশেষভাবে প্রস্তুত করা বইয়ের তাক থাকে, যাতে কোনো স্থানে যানটি দাঁড়ালে সেখানকার বাসিন্দারা সহজেই তাদের পছন্দের বইগুলিকে খুঁজে নিতে পারেন। ভ্রাম্যমাণ গ্রন্থাগারের মাধ্যমে গ্রামে কিংবা শহরের বিভিন্ন স্থানে গ্রন্থাগারের সেবা পৌঁছানো হয়। এই গ্রন্থাগারের মাধ্যমে সেই সমস্ত মানুষদের সেবা পৌছোনো যায়, যারা শারীরিকভাবে অক্ষম হওয়ার কারণে গ্রন্থাগারে পৌছতে পারেন না বা দূরত্বের কারণে স্থায়ী গ্রন্থাগারে যেতে পারেন না। এই সমস্ত গ্রন্থাগারে সাধারণ বই বা কম্পিউটার ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতির মাধ্যমে ই-বই বা অডিও বই বিতরণ করা হয়ে থাকে।


অটোয়া পাবলিক লাইব্রেরির ভ্রাম্যমাণ গ্রন্থাগার

ইতিহাস সম্পাদনা


ইংল্যান্ডের ওয়ারিংটন শহরের ১৮৫৯ খ্রিষ্টাব্দের ভ্রাম্যমাণ গ্রন্থাগার

খ্রিস্টীয় দশম শতাব্দীতে ইরানে সাহিব ইসমাইল ইবনে আব্বাদ (৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দ/ ৩২৬ হিজরী-৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দ/ ৩৮৫ হিজরী) নামক ব্যক্তির কথা ইতিহাসে পাওয়া যায়। তিনি অধ্যয়নপ্রিয় মানুষ ছিলেন। কোথাও সফরে বের হলে সাথে উট ও ঘোড়ায় কিতাব সাজিয়ে গ্রন্থাগার বানিয়ে তারপর বের হতেন। কখনো কখনো এর সংখ্যা দাঁড়াতো ৩০ উট কখনো ৪০ উট। নিজে ভ্রমণকালে অধ্যয়ন করতেন। তার ছাত্ররাও বিভিন্ন সময় এই পাঠাগার থেকে উপকৃত হতো। কেউ কেউ তাকে ভ্রাম্যমাণ গ্রন্থাগারের আবিষ্কারক বলেছেন।[১][২][৩]


১৮৫৭ খ্রিষ্টাব্দে দ্য ব্রিটিশ ওয়ার্কম্যান পত্রিকায় প্রকাশিত হয় যে,[৪] ইংল্যান্ডের কুম্ব্রিয়া অঞ্চলের আটটি গ্রামে একটি ভ্রাম্যমাণ গ্রন্থাগার ক্রিয়াশীল অবস্থায় রয়েছে। জর্জ মুর নামক একজন সমাজসেবী ব্যবসায়ী ভালো ভালো সাহিত্যকর্মকে গ্রামীণ জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে এই প্রকল্পের সৃষ্টি করেন।[৫] ১৮৫৮ খ্রিষ্টাব্দে ওয়ারিংটন প্যারাম্বুলেটিং লাইব্রেরী ইংল্যান্ডের অপর একটি প্রাচীন ভ্রাম্যমাণ গ্রন্থাগারের উদহারণ। ওয়ারিংটন মেকানিক'স ইনস্টিটিউট দ্বারা পরিচালিত ঘোড়ায় টানা এই ভ্রাম্যমাণ গ্রন্থাগারের মাধ্যমে স্থানীয় উৎসাহী মানুষদের বই ধার দেওয়া হত।[৬]


১৯০৪ খ্রিষ্টাব্দে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সাউথ ক্যারোলিনয় পিপল'স ফ্রী লাইব্রেরী অফ চেষ্টার কাউন্টি নামক খচ্চর বাহিত একটি ভ্রাম্যমাণ গ্রন্থাগার স্থাপিত হয়।[৭] মেরী লেমিষ্ট টিটকম্ব (১৮৫৭-১৯৩২) নামক ওয়াশিংটন কাউন্টি ফ্রি লাইব্রেরীর এক গ্রন্থাগারিক যখন উপলব্ধি করেন যে তার গ্রন্থাগারের বইগুলি এলাকার সমস্ত মানুষের কাছে পৌছতে ব্যর্থ হচ্ছে,[৮] তিনি ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দে ভ্রাম্যমাণ গ্রন্থাগার চালু করে প্রত্যন্ত এলাকার মানুষদের নিকট বই পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।[৯] ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে সারাহ বায়ার্ড আস্কিউ নামক এক প্রখ্যাত মার্কিন গ্রন্থাগারিক তার ফোর্ড মডেল টি গাড়ীতে করে নিউ জার্সির গ্রামীণ এলাকাতে বই পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করতেন।[১০]


বাংলাদেশে ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির প্রচলন বেশ পুরনো। ১৯৬৩ সালে কিশোরগঞ্জ পাবলিক লাইব্রেরি ভ্রাম্যমাণ পাঠাগার চালু করে। তবে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ গ্রন্থাগারের কার্যক্রম শুরুর হয় ১৭ ডিসেম্বর, ১৯৯৯ সালে। প্রথম দিকে কার্যক্রমটি ঢাকায় আরম্ভ হলেও আজ তা বাংলাদেশের অধিকাংশ জেলায় বিস্তৃত হয়েছে।[১১]

বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের বই ভর্তি কাচের গাড়ি বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছে, পাঠকরা বই সংগ্রহ করছে, এমন আমরা দেখে থাকি। যেন ভ্রাম্যমান লাইব্রেরী। দারুণ আইডিয়া, তাই না? কিন্তু বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের এই ভ্রাম্যমান লাইব্রেরীটাই কিন্তু দেশের প্রথম ভ্রাম্যমান লাইব্রেরী নয়। বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠারও অনেক অনেক আগে ১৯৩৩ সালে আমাদের প্রাণ প্রিয় রংপুরে এমন একটা লাইব্রেরী গড়ে উঠেছিল। যা আমাদের অঞ্চলে নারী শিক্ষায় রেখেছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। যে লাইব্রেরীতে নারীদের আসতে হতো না। বাসায় বসেই নারীরা বই পড়ার সুযোগ পেতেন। আর নারী সমাজের শিক্ষা ও জ্ঞান অর্জনের জন্য ভ্রাম্যমান লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠার মহৎ এই কাজ করেছিলেন মৌলভী খেরাজ আলী। গত শতাব্দীর প্রথম দিকেই তিনি বুঝতে পেরেছিলেন মায়েরা না জাগলে দেশ কখনই জাগবে না। তাই নারী সমাজকে শিক্ষা ও জ্ঞানের আলোকে আলোকিত করতে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন “খাতুনিয়া সার্কুলেটিং লাইব্রেরী”। তাঁর এই অসাধারণ কীর্তির জন্য রংপুরের বরেণ্য ব্যক্তিবর্গের তালিকায় তাঁর নাম থাকা উচিৎ ছিল প্রথম সারীতে। অথচ, এটা খুবই দুঃখজনক যে আমরা খুব কম জনই রংপুরের এই বরেণ্য ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে জানি।প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যে ও সৌন্দর্যের লীলা নিকেতন বৃহত্তর রংপুরের ইতিহাস- ঐতিহ্য, শিক্ষা-সংস্কৃতি, অতি সমৃদ্ধ ও সুপ্রাচীন। তিস্তা, ঘাগট , চিকলি, আঁখিরা, দুধকুমর, ধরলা, যমুনেশ্বরী বিধৌত রংপুরের উর্বর ভূমিতে যেমন ছিল জমিদার বিত্তবানদের আবাসভূমি তেমনি আগমন ঘটেছিল অনেক আধ্যাত্মিক সাধক পুরুষের। রংপুর জন্ম দিয়েছে অনেক আলোকিত মানুষ যারা তাদের কাজের মধ্য দিয়ে রংপুর করেছেন ধন্য। রংপুরের বরেণ্য ব্যক্তিবর্গের নাম নিতে গেলে চলে আসে নবাব নূর উদ্দিন বাকের মোহাম্মাদ জং (নুরুলদিন), ফকির মজনু শাহ্‌, মাওলানা কেরামত আলী (রাঃ), জমিদার সুরেন্দ্র নাথ রায় চৌধুরী, খান বাহাদুর তসলিম উদ্দিন আহমেদ, কবি হেয়াত মাহমুদ, খান বাহাদুর এ্যাডঃ শাহ্‌ আব্দুর রউফ, মণি কৃষ্ণ সেন, তুলসী লাহিড়ী, কাজী মোহাম্মদ ইদ্রিস, কাজী মোঃ ইলিয়াস, সাংবাদিক মহমুদ হোসেন, পাখী মৈত্র, ডঃ ওয়াজেদ মিয়া, সাংবাদিক মোনাজাত উদ্দিন বা হালের আনিসুল হক এই নাম গুলি। আরও অনেক নাম চলে আসে যা এই পরিসরে হয়তো লেখা সম্ভব নয়। কিন্তু বাধ্যতামূলক একটি নাম যা না উল্লেখ করলে রংপুরের বরেণ্য ব্যক্তিবর্গের তালিকা সম্পূর্ণ হবে না। তিনি হচ্ছেন বাঙ্গালী নারী জাগরণের পথিকৃৎ বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত। ভারতীয় উপমহাদেশে নারী জাগরণের অগ্রদূত হিসেবে তাঁর নাম সোনার অক্ষরে লেখা থাকবে। আমি ইচ্ছে করেই বেগম রোকেয়া নামটি শেষে এনেছি। কারণ, রংপুরের এতো সব স্মরণীয়, বরণীয় ব্যক্তিত্বের সাথে আর একটি নাম শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করতে হয়। তিনি হচ্ছেন মৌলভী খেরাজ আলী । বেগম রোকেয়া যে কাজ শুরু করে গিয়েছিলেন সেই পথ ধরে তিনি সেই কাজকে এগিয়ে নিতে আজীবন চেষ্টা করে গেছেন। আর তাই তাঁর পরিচয় দেয়ার জন্যই বেগম রোকেয়ার নাম শেষে বলা। রংপুরের বিভিন্ন জনহিতকর, কল্যাণকর কাজের সাথে নারী সমাজের শিক্ষা, জ্ঞান অর্জনের জন্য একটি মহৎ কাজ করেছেন মৌলভী খেরাজ আলী। তাঁর একান্ত প্রচেষ্টায় তিনি প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন “খাতুনিয়া সার্কুলেটিং লাইব্রেরী”। তাঁর এই লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠা একটি ঐতিহাসিক ও নজিরবিহীন ঘটনা। নারী জাতির জাগরণের জন্য বেগম রোকেয়ার মধ্যে যে আবেগ ও বাস্তব প্রয়োজনবোধ কাজ করেছিল ঠিক একই ধরণের বোধ উচ্চকিত ছিলো মৌলভী খেরাজ আলীর মধ্যে। তিনি গত শতাব্দীর প্রথম দিকেই বুঝতে পেরেছিলেন মায়েরা না জাগলে দেশ কখনই জাগবে না। অথচ, সেই সময় পর্যন্তও এমনকি তার অনেক পরেও এই উপমহাদেশের মা, বোনদের “রান্না করা, খাওয়া এবং আবারও রান্না করা”, এই চক্রের মধ্যেই বাঁধা ছিল। শৈশবে কন্যা হিসেবে পিতার আশ্রয়ে, যৌবনে স্ত্রী হয়ে স্বামীর আশ্রয়ে এবং বার্ধক্যে পুত্রের আশ্রয় প্রাপ্তি ছিল নারী সমাজের নিয়তি। পাশাপাশি এই ধারণাও ছিল যে, নারী সমাজের একমাত্র কাজ পুত্র সন্তান জন্ম দেওয়া নইলে লাঞ্ছনা আর বঞ্চনা। আসলে খেরাজ আলী বেগম রোকেয়ার প্রদর্শিত পথ ধরেই নারী সমাজকে এগিয়ে নিতে কাজ করে গেছেন। তিনি চেয়েছিলেন নারী সমাজকে শিক্ষা, জ্ঞানের আলোকে আলোকিত করতে। এই উদ্দেশ্যেই তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন খাতুনিয়া সার্কুলেটিং লাইব্রেরী। যে লাইব্রেরীতে নারীদের আসতে হবে না। বাসায় বসেই নারীরা বই পড়ার সুযোগ পাবেন। জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে নিজেদের চিনতে পারবেন। তিনি বিশ্বাস করতেন "সুশিক্ষিত লোক মানেই স্বশিক্ষিত"। তার এই উপলব্ধি ছিল বাস্তব সম্মত। মূলত এই বোধ থেকেই তিনি মহীয়সী নারী বেগম রোকেয়ার জন্মভূমিতেই বেগম রোকেয়ার মৃত্যুর এক বছরের কম সময়ের মধ্যে ১৯৩৩ সালের ২৫ অক্টোবর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন “খাতুনিয়া সার্কুলেটিং লাইব্রেরী”। বেগম রোকেয়ার স্কুল শুরু হয়েছিল মাত্র তিন খানা বেঞ্চ ও সাত জন ছাত্রী নিয়ে। আর খেরাজ আলী তার “খাতুনিয়া সার্কুলেটিং লাইব্রেরী”র অস্তিত্ব প্রকাশ করেছিলেন মাত্র ৯৩টি বই নিয়ে। এই লাইব্রেরীর নামের মধ্যেই এর তাৎপর্য ও উদ্দেশ্য নিহিত আছে। খাতুন শব্দটির আভিধানিক অর্থ হচ্ছে মহিলা। তাই কোন ব্যক্তির নামে যে এই লাইব্রেরীর নামকরণ করা হয়নি তা নিশ্চিত ভাবেই বলা যায়। এই প্রতিষ্ঠানের ঘোষণা পত্রে দেখা যায় লাইব্রেরী সম্পর্কে লেখা রয়েছে, "A laibrary for the women folk". মানে দাঁড়াচ্ছে মহিলাদের জন্যই এই লাইব্রেরী। “সার্কুলেটিং” ইংরেজি শব্দ যার মানে ভ্রাম্যমান। অর্থাৎ মফস্বল শহরের সম্রান্ত মহিলারা যারা খুব একটা ভ্রমণ করেননা তাদের জন্য প্রতিষ্ঠিত লাইব্রেরীর নাম রাখা হয়েছে “খাতুনিয়া সার্কুলেটিং লাইব্রেরী”। আসলে এই লাইব্রেরী ভ্রাম্যমান বা চলন্ত লাইব্রেরী হিসেবেই পরিচিত। বাড়িতে মহিলাদের কাছে বই পৌঁছে দেয়া হতো। আজ ভাবতেই বিস্মিত হতে হয় কি অসাধারণ সেবামূলক কাজ ছিল এই লাইব্রেরী পরিচালনা। কাঁধের ব্যাগে বই নিয়ে সাইকেল চালিয়ে তিনি বাড়ি বাড়ি গিয়ে বই দিয়ে আসতেন এবং সপ্তাহান্তে গিয়ে ঐ বই ফেরত নিয়ে নতুন বই দিয়ে আসতেন। এই লাইব্রেরী সম্পর্কে কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকার ২৬ বৈশাখ ১৩৪২ বঙ্গাব্দ তারিখে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, “খাতুনিয়া সার্কুলেটিং লাইব্রেরী" নামে একটি লাইব্রেরী মৌলভী খেরাজ আলী কর্তৃক স্থাপিত হইয়াছে। লাইব্রেরীর উদ্দেশ্য অশিক্ষিত ও অর্ধ শিক্ষিত মধ্যবিত্ত পরিবারের স্ত্রীলোক ও বালিকাদের মধ্যে সৎ সাহিত্য প্রচার। লাইব্রেরীর প্রতিষ্ঠাতা এক উদারচেতা ও উৎসাহী যুবক, যিনি নিজেই পুস্তকের বোঝা লইয়া হিন্দু মুসলমান নির্বিশেষে সকলের গৃহে গৃহে পুস্তক পৌঁছাইয়া থাকন।”


কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথেও মৌলভী খেরাজ আলী মণ্ডলের পত্রালাপ ছিল।  তিনি পত্র লিখেছিলেন কবিগুরুকে।  কবিগুরুর অসুস্থতার কারণে তাঁর পক্ষে তাঁর ব্যক্তিগত সচিব অনিল চন্দ্র চন্দ সেই পত্রের জবাব দিয়েছিলেন ১৬ জুন ১৯৩৯ ও ৯ জুলাই ১৯৩৯ ইং তারিখে।  সাথে লাইব্রেরির জন্য কবিগুরু পাঠিয়েছিলেন সাতটি বই।


রংপুরের ঐতিহ্যবাহী পত্রিকা 'রংপুর দর্পণ' ১৬ চিত্র ১৩৪১ সংখ্যায় এই লাইব্রেরী সম্পর্কে বলা হয়েছে, “মৌলভী মোহাম্মাদ খেরাজ আলী এই প্রতিষ্ঠানের জনক। উন্নত ও অভিনব আদর্শে ইহা রংপুরের এবং রংপুরের বাহিরের বহু বিশিষ্ট লোকের দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়াছে। প্রতি মাসে পাঁচ পয়সা প্রদানে নানাবিধ সুখপাঠ্য সৎ গ্রন্থ পাঠের সুবিধা প্রদান করায় বহু পরিবারের মধ্যে জ্ঞান প্রচারের বিশেষ সহায়তা হইয়াছে।” এবার মৌলভী খেরাজ আলী সম্পর্কে কিছু বলার প্রয়োজন মনে করছি। ৫ বৈশাখ ১৩০০ বঙ্গাব্দে জন্ম গ্রহণ করেন তিনি বর্তমান গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ীর গড়েয়ায়। পিতার নাম মৌলভী আলীম উদ্দিন আহমেদ। মাতা মোছাঃ করিমননেছা। তিনি ১৯১৬ সালে গাইবান্ধা হাই স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ময়মনসিংহ এর আনন্দ মোহন কলেজে পড়তে যান। কিন্তু পিতা মারা যাবার কারণে তার পক্ষে আর পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হলো না অর্থাভাবে। জীবন জীবিকার তাগিদে চাকুরীতে যোগ দিলেন সিভিল কোর্টে কেরানী পদে। “খাতুনিয়া সার্কুলেটিং লাইব্রেরী” প্রতিষ্ঠা হবার পরে তাকে বদলী করা হলো নীলফামারীতে। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই রংপুর জজ কোর্টে ফিরিয়ে আনা হলো তাঁকে। এখান থেকেই তিনি রেকর্ড কিপার হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন ১৯৫২ সালে। রংপুর শহরের মুন্সি পাড়ায় ছিল তাঁর নিবাস। দীর্ঘজীবী মৌলভী খেরাজ আলী ১৯৮৭ সালে ইন্তেকাল করেন। 


তথ্য সূত্র : 

সূত্র:

১] ফারুকী, মহিউদ্দীন (মে ২০১৩)। "হিজরী চতুর্থ শতাব্দীতে ভ্রাম্যমাণ গ্রন্থাগার"। আলকাউসার ডট কম। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জানুয়ারি ২০১৪।

২] শাহবায, সৈয়দ আলী। "Saheb Ibn Abbad"। ইমামরেযা ডট নেট। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জানুয়ারি ২০১৪।

[৩] A.T.M. Shamsuzzoha (২০১২)। "Buwayhid Library and It's Management: A Historical Analysis"। The Eastern Librarian। 23 (1): 51–63

[৪] an article, The British Workman, 1 February 1857, mealsgate.org.u

[৫] George Moore, Mealsgate.com, accessed September 2011

৬] Orton, Ian (১৯৮০)। An Illustrated History of Mobile Library Services in the UK with notes on travelling libraries and early public library transport। Sudbury: Branch and Mobile Libraries Group of the Library Association। আইএসবিএন 0-85365-640-1।

[৭] Chester County Free Public Library history, accessed May 2010

৮] Washington County Free Library, First Annual Report for the Year ending October 1, 1902

[৯] Maryland State Archives, Maryland Women's Hall of Fame, Washington County Free Library

১০] Susan B. Roumfort (১৯৯৭)। "Sarah Byrd Askew, 1877-1942"। Joan N. Burstyn। Past and Promise: Lives of New Jersey Women। Syracuse University Press। পৃষ্ঠা 103–104।
১১। "লাইব্রেরি:বিশ্ব যেখানে তাকের উপর"। সাপ্তাহিক আমোদ। জুলাই ৩ , ২০১৩। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ 4 January 2014। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
১২) মৌলভী খেরাজ আলীর জন্ম শত বার্ষিকী উপলক্ষে প্রকাশিত স্মরণিকা ২) খাতুনিয়া সার্কুলেটিং লাইব্রেরীর ৫২ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর স্মরণিকা

১৩) রংপুর সংবর্তিকা : মুহাম্মদ আলীম উদ্দিন 
১৪) উম্মে হাবিবা জাকিয়া হক, জেলা শিক্ষা অফিসার (অব:) রংপুর । 
১৫) উইকিপিডিয়া 
১৬) ফেসবুক
১৭) শাহ রিয়াদ আনোয়ার শুভ৷


রবীন জাকারিয়া: লেখক ও উন্নয়নকর্মি৷

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

4 মন্তব্যসমূহ

  1. অসংখ্য ভালবাসা ও কৃতজ্ঞতা

    উত্তরমুছুন
  2. আমাদের এই রৈখিক পরিবারের সমৃদ্ধি কামনা করছি৷ পাশাপাশি আসুন সকলে আরো বেশি বন্ধুদের ইনভাইট করি৷

    উত্তরমুছুন
  3. তথ্যবহুল লেখা৷ লেখক সম্পাদক উভয়কে ধন্যবাদ৷ অনেক হারিয়ে যাওয়া ইতিহাস জানলাম৷

    উত্তরমুছুন
  4. রবীন জাকারিয়াজানুয়ারী ১৬, ২০২২

    ধন্যবাদ

    উত্তরমুছুন

মন্তব্য বিষয়ক দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় বহন করবে না।

Back To Top